ঢাকার বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি’র ইতিহাস

প্রকাশঃ জুন ২৮, ২০১৫ সময়ঃ ৯:৩২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

old-dhakaএকসময় ঢাকা শহরকে বলা হতো, “বায়ান্ন বাজারের তেপান্ন গলি”। স্বভাবতই, সময়ের সাথে বেড়েছে সড়ক ও বাজারের সংখ্যা। ঐতিহাসিক প্রকাশনা অনুসারে, এই সড়ক ও স্থাপনাগুলোর নামকরণের পিছনে রয়েছে মোঘল, ফ্রেঞ্চ, ব্রিটিশ ও বাংলার নবাবদের শাসনামলের অগনিত গল্প।

আলুর বাজারঃ সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে, জাফর খান ঢাকায় বাস করতে আসেন। তিনি লালবাগ এলাকায় বসবাস করতেন। এই এলাকাটি তার মালিকানাধিন ছিল যা আজ ‘আলুর বাজার’ নামে পরিচিত।
তার ছেলের নাম ছিল আলেয়ার খান। আলেয়ার খানের সময়ই এই বাজারের কার্যক্রম পূর্ণ গতিতে চলমান ছিল। মোঘল সম্রাট আজিমুস্‌সান এর মতে এই বাজারের মূল নাম ছিল ‘আলেয়ার খানের বাজার’ যা কালের বিবর্তনে মানুষ ‘আলুর বাজার’ বলা শুরু করে।

ইস্কাটনঃ ইস্কাটন শব্দটি ‘স্কটল্যান্ড’ এর একটি বিকৃত সংস্করণ। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়কালে একটি গির্জা কিছু স্কটিশ প্রচারক দ্বারা সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই নামের উৎপত্তি সেখান থেকেই।

কাকরাইলঃ ১৯ শতকের শেষ দশকে, ঢাকার ব্রিটিশ কমিশনারের নাম ছিল জনাব ককেরেল (Cockerell)। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুন্তাসির মামুনের বর্ণনা অনুযায়ী, যেহেতু কূটনীতিকদের নামানুসারে ঢাকার সড়কের নামকরণ করার একটা প্রবনতা ছিল, সেহেতু তার নামানুসারে সম্ভবত একটি রাস্তা ছিল যার মাধ্যমে পরবর্তীতে ওই এলাকা এই নামে পরিচিতি লাভ করে। মানুষ শেষ পর্যন্ত ককেরেলকে কাকরাইল উচ্চারণ করা শুরু করে।

চকবাজারঃ ১৮০৯ সালে চার্লস ডেল চকবাজার সম্পরকিত বর্ণনায় বলেছেন- ‘চক’ ‘Nakhas’ দ্বারা পরিচিত। এটি ২০০ ফুটের একটি বর্গক্ষেত্র এলাকা যা সূর্যাস্তের সময় জমজমাট হয়ে ওঠে। আরবিতে ‘Nakhas’ অর্থ হচ্ছে ‘দাস বিক্রেতা’। মোঘল আমলে এটি ছিল দাস ব্যবসায় এবং লোকজনের আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু। এখন শেই বিনোদনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এই এলাকায় তৈরি হচ্ছে মুখরোচক সব খাবার।

ধানমন্ডিঃ মোঘল শাসনামলে এখানে একটি ঈদগাহ ষাট গম্বুজ মসজিদ ছিল। তাই ধরে নেয়া যায় যে এখানে কিছু বাসস্থানও ছিল। এখানে একটি বিশাল হাঁট বসত যেখানে চাল ও হরেক রকমের শস্য কেনাবেচা হত। সেখান থেকেই ‘ধানমন্ডি’ নামের উৎপত্তি।

 

বেচারাম দৈউড়িঃ বেচারামের নাম তালিকাভুক্ত করা হয় ১৭৯০ সালে। তবে তিনি কি করতেন সেই সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। ধারনা করা হয় তিনি হয়ত ওই এলাকায় বসবাসরত কোন উচ্চপদস্থ অফিসার বা প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ছিলেন যার নামে এলাকাটির নামকরণ করা হয়।

বেগমবাজারঃ এই এলাকার নামকরণের পিছনে সবচেয়ে জনপ্রিয় ইতিহাস হল, ১৯৩৯-১৯৪০ সালে সরফরাজ খান ঢাকার নায়েব-এ-নাজিম ছিলেন। তার মেয়ের নাম ছিল লাডলি বেগম। অনেকের মতে তার নামেই এই এলাকার নামকরণ করা হয়। বেগমবাজার মসজিদের কাছাকাছি অবস্থিত মাছে বাজারটিও তার মালিকানাধীন ছিল। এই বাজারটি ১৯৭৭ সালে অগ্নিদগ্ধ হয়। অতঃপর কিছু বর্ধিত ভাতার বিনিময়ে সরকার লাডলি বেগমের কন্যা পুন্নী বেগম ও হাজি বেগম থেকে এর মালিকানা গ্রহণ করেন।

এলিফ্যান্ট রোডঃ শুনতে অবাক লাগলেও, এককালে আমাদের এই আধুনিক নগরী ঢাকায় প্রচুর হাতির আনাগোনা ছিল। তবে তাদের মাঠে চরা বা গোসল করার জন্য কোন নির্দিষ্ট জায়গা ছিল না। ১৮৬৪ সালে দুই কাউন্সিল গঠনের পূর্বে লেফটেন্যান্ট গভর্নর ঢাকা দর্শন করতে আসেন। ঢাকা কমিটির সদস্যদের অভিযোগ অনুযায়ী সেসময় হাতির পাল ঢাকায় ভয়ানক উপদ্রব করে। রমনা এলাকাটি হাতির চরণ এবং এর আশেপাশের খালগুলো গোসল এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। পিলখানা থেকে রমনা পর্যন্ত হাতিদের চলার পথটি কালের বিবর্তনে এলিফ্যান্ট রোড নামে পরিচিতি লাভ করে।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G